গাজায় ১৫ জন জরুরি সেবাকর্মী নিহত
সমাজকাল ডেস্ক:
গত মার্চ মাসে গাজায় প্যালেস্টাইন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিআরসিএস) ও জাতিসংঘের গাড়িবহরে হামলায় ১৫ জন জরুরি সেবাকর্মী নিহত হন। সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) এই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদনে এরজন্য “পেশাদার ব্যর্থতা”, “অপারেশনাল ভুল বোঝাবুঝি” এবং “নির্দেশ লঙ্ঘন”-কে এই হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী করা হয়েছে।
তদন্তে জানানো হয়, অভিযুক্ত ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়েছে কারণ তিনি ঘটনাটির পর “অসম্পূর্ণ ও ভুল তথ্য” দিয়েছিলেন। অপর এক সিনিয়র কমান্ডারকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিরস্কার করা হয়েছে।
২৩ মার্চের ওই হামলায় পিআরসিএস এর অ্যাম্বুলেন্স, একটি জাতিসংঘের গাড়ি ও একটি ফায়ার ট্রাক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। এতে ১৪ জন জরুরি কর্মী ও একজন জাতিসংঘ কর্মী নিহত হন। আইডিএফ দাবি করেছে, ঘটনাস্থলটি ছিল “শত্রুপূর্ণ ও বিপজ্জনক যুদ্ধক্ষেত্র” এবং সেসময় তাদের বাহিনী গাড়িগুলোকে হুমকি হিসেবে চিনতে ভুল করেছে।
তবে পিআরসিএস এই তদন্ত প্রতিবেদনকে “অগ্রহণযোগ্য ও ভ্রান্ত” বলে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, “মাঠ পর্যায়ে ব্যক্তিগত ভুলের মাধ্যমে দায় এড়াতে” এই প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হয়েছে।
ঘটনার পর আইগষডিএফ দাবি করে, নিহতদের মধ্যে ছয়জন হামাস সদস্য ছিলেন, এবং তারা কোন ধরণের তাৎক্ষণিক বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটায়নি। তারা বলছে, রাতের অন্ধকার ও দুর্বল দৃশ্যমানতার কারণে অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে সঠিকভাবে শনাক্ত করা যায়নি। যদিও পরে একটি নিহত মেডিকের ফোনে পাওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, গাড়িগুলোতে জরুরি সংকেত ও লাইট জ্বলছিল এবং কর্মীরা প্রতিফলক পোশাক পরা অবস্থায় ছিলেন।
এই ভিডিও প্রকাশের পর আইডিএফ তাদের আগের বক্তব্য “ভুল” বলে স্বীকার করে।
নিহতদের মরদেহ বালুর নিচে চাপা ছিল এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো নিরাপদে সেই স্থান শনাক্ত না করতে পারায় এক সপ্তাহ পর মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া, ঘটনার পর পিআরসিএসের এক মেডিককে আটক করা হয়, যার নাম আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটি জানিয়েছে আসসাদ আল-নাসাসরা।
এই ঘটনার পর আন্তর্জাতিক অনেক সংস্থা স্বাধীন তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, এর আগেও আইডিএফ বিশ্ব সেন্ট্রাল কিচেনের সাতজন ত্রাণকর্মী নিহতের ঘটনায় কয়েকজন অফিসারকে বরখাস্ত ও শাস্তি দিয়েছিল।
২০২৪ সালের মে মাসে রাফাহতে বড় ধরনের সামরিক অভিযান চালায় ইসরায়েল, যেখানে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ঘটে। সাম্প্রতিক দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় বহু মানুষ তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়িঘরে ফিরে যায়। মার্চের ১৮ তারিখে যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় শেষ হওয়ার পর ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করে।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের অভূতপূর্ব হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় এই সামরিক অভিযান শুরু করে। হামলায় ১,২০০ জন নিহত ও ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়েছিল। গাজায় এ পর্যন্ত অন্তত ৫১,২০১ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাসমূহ