কে হবেন পরবর্তী পোপ? ভোট শুরু ৭ মে, সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা
সমাজকাল ডেস্ক :
পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে ভ্যাটিকানে শুরু হতে যাচ্ছে ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়। বিশ্বের ১.৪ বিলিয়ন ক্যাথলিকের ধর্মীয় নেতৃত্ব কে দেবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে আসন্ন গোপন কনক্লেভ থেকে। ৭ মে শুরু হতে যাচ্ছে পরবর্তী পোপ নির্বাচন।
🔍 নির্বাচন প্রক্রিয়া কীভাবে?
পোপ নির্বাচনের দায়িত্ব বর্তায় কার্ডিনালদের কলেজের ওপর। মোট ২৫২ জন কার্ডিনালের মধ্যে যারা বয়সে ৮০-এর নিচে, তাদেরই ভোট দেওয়ার অধিকার রয়েছে—সংখ্যায় ১৩৫ জন।
ভ্যাটিকানের সিসটিন চ্যাপেলে অনুষ্ঠিতব্য এ নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাইরের সঙ্গে সব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকবে। ভোট গোপন, এবং নির্বাচিত হতে হলে প্রয়োজন দুই-তৃতীয়াংশ ভোট।
ধোঁয়ার রঙ দিয়েই ঘোষণা করা হবে ফলাফল:
- কালো ধোঁয়া: কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি
- সাদা ধোঁয়া: নতুন পোপ নির্বাচিত
🌍 পোপ ফ্রান্সিসের সংস্কার ও বৈচিত্র্য
ফ্রান্সিস তার সময়কালে গ্লোবাল সাউথ থেকে বিপুলসংখ্যক কার্ডিনাল মনোনীত করেন, যার ফলে নির্বাচনে ভৌগোলিক ও মতাদর্শিক বৈচিত্র্য বেড়েছে। এবারের কনক্লেভে প্রথমবারের মতো মঙ্গোলিয়া, ইরান, পূর্ব তিমুর-এর প্রতিনিধিত্ব থাকছে।
🎯 কার্ডিনালরা কী ধরনের নেতা চান?
বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্ভাব্য বৈশিষ্ট্যগুলো হতে পারে:
- আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে দক্ষ
- উদার বা মাঝারি মনোভাবসম্পন্ন
- ক্যাথলিক ধর্মে সদস্য হ্রাস, যৌন কেলেঙ্কারির মোকাবিলা ও ধর্মনিরপেক্ষতার চ্যালেঞ্জ সামাল দিতে সক্ষম
- বয়সে খুব বেশি তরুণ নন, যাতে পোপত্ব দীর্ঘায়িত না হয়
- ঐক্যবদ্ধ ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে পারেন
🧭 সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা
🔹 কার্ডিনাল লুইস আন্তোনিও টাগলে (৬৭) – ফিলিপাইনের প্রাক্তন আর্চবিশপ, ভ্যাটিকানে ইভানজেলাইজেশন শাখার প্রধান। “এশিয়ান ফ্রান্সিস” নামে পরিচিত। উদার ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে।
🔹 কার্ডিনাল পিয়েত্রো পারোলিন (৭০) – ভ্যাটিকানের সেক্রেটারি অব স্টেট। চীনের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে অগ্রণী। মধ্যপন্থী ও কূটনৈতিক।
🔹 কার্ডিনাল পিটার টার্কসন (৭৬) – ঘানার এই কার্ডিনাল আফ্রিকার মধ্যে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য প্রার্থী, যদিও রক্ষণশীল ধ্যানধারণা রয়েছে।
🔹 কার্ডিনাল পিটার এরদো (৭২) – হাঙ্গেরির আর্চবিশপ, কট্টর রক্ষণশীল ও অভিবাসনবিরোধী অবস্থানের জন্য সমালোচিত।
🔹 কার্ডিনাল মাত্তেও জুপ্পি (ইতালি) – শান্তি মিশনে নেতৃত্ব দিয়েছেন ইউক্রেন ও মোজাম্বিকে। ফ্রান্সিসের নীতিতে বিশ্বাসী।
🔹 কার্ডিনাল ফ্রিডোলিন আমবঙ্গো বেসুংগু (ডিআর কঙ্গো) – আফ্রিকার সবচেয়ে বড় ক্যাথলিক জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি। সামাজিক অধিকার নিয়ে সোচ্চার, তবে অত্যন্ত রক্ষণশীল।
🔹 কার্ডিনাল মাইকেল চের্নি (৭৮) – ক্যানাডীয় যিশুসমাজী সদস্য, সমাজকল্যাণ নিয়ে কাজ করেন। ধারাবাহিকতায় ফ্রান্সিস ঘরানার প্রতিনিধি।
🔹 কার্ডিনাল পিয়েরবাতিস্তা পিজ্জাবাল্লা (৬০) – জেরুজালেমের লাতিন প্যাট্রিয়ার্ক। গাজা ইস্যুতে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও সাহসী অবস্থানের জন্য পরিচিত। বয়স তুলনায় কম হওয়ায় সম্ভাবনা কিছুটা কম।
🔹 কার্ডিনাল রবার্ট সারাহ (৭৯) – গিনি থেকে আসা এই রক্ষণশীল কার্ডিনাল অতীতেও assassination list-এ ছিলেন। ফ্রান্সিসের নীতির ঘোর বিরোধী।
🔹 কার্ডিনাল অ্যাঞ্জেলো স্কোলা (৮৩) – ২০১৩ সালের নির্বাচনে ফেভারিট ছিলেন, তবে বর্তমানে ভোটে অযোগ্য (৮০ বছরের বেশি)। তবু নাম আলোচনায়।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতৃত্ব কে হবেন, তা ৭ মে থেকে শুরু হওয়া কনক্লেভের মাধ্যমে নির্ধারিত হবে। কেউ হয়তো হবেন প্রথম এশিয়ান বা আফ্রিকান পোপ, কেউ হবেন হয়তো পুরাতন ধ্যানধারণার পুনরাবৃত্তিকারী। তবে পরিষ্কার একটাই—এই নির্বাচন চূড়ান্তভাবে অনিশ্চিত এবং ঐতিহাসিক।