কানাডার নির্বাচনে মার্ক কার্নির জয়, ট্রাম্পের হুমকিকে স্পষ্ট প্রত্যাখ্যান
সমাজকাল ডেস্ক:
কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি বিজয়ী হয়েছেন। প্রথমেই তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, তার দেশ কখনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির কাছে নতি স্বীকার করবে না। সোমবার মধ্যরাতে ফেডারেল নির্বাচনে লিবারেল পার্টির বিজয় নিশ্চিত হওয়ার পর এক বিজয় ভাষণে তিনি এ মন্তব্য করেন।
লিবারেল পার্টির নেতা কার্নি বলেন, “মাসের পর মাস ধরে আমি সবাইকে সতর্ক করে আসছি—আমেরিকা আমাদের জমি, আমাদের সম্পদ, আমাদের পানি, আমাদের দেশ চাইছে। এটা কেবল কথার হুমকি নয়। ট্রাম্প আমাদের ভেঙে দিতে চায়, যাতে আমেরিকা আমাদের অধিকার করতে পারে। কিন্তু তা কখনোই ঘটবে না।”
তিনি আরও বলেন, কানাডা এখন ‘আমেরিকান বিশ্বাসঘাতকতার ধাক্কা’ কাটিয়ে উঠেছে এবং নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য নিজেদের উপর নির্ভর করতে শিখেছে।
নির্বাচনী ফলাফল ও পরিস্থিতি
এই নির্বাচনে লিবারেল পার্টি টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় ফিরেছে। তবে তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে কি না, তা এখনও পরিষ্কার নয়। সিএনএন-এর অংশীদার সিটিভি জানিয়েছে, লিবারেলরা একটি স্বল্পসংখ্যক সংখ্যালঘু সরকার গঠন করতে চলেছে, যদিও সিবিসি জানিয়েছে, এখনই চূড়ান্ত কিছু বলা সম্ভব নয়।
কনজারভেটিভ পার্টির নেতা পিয়েরে পয়েলিভরে পরাজয় স্বীকার করে বলেছেন, কার্নি ‘খুব অল্প ব্যবধানে’ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছেন এবং কনজারভেটিভরা কানাডার স্বার্থ রক্ষায় সরকারকে সহায়তা করবে।
মার্ক কার্নির রাজনৈতিক উত্থান
মার্ক কার্নি এর আগে কোনো রাজনৈতিক দায়িত্বে ছিলেন না। তবে বিশ্বজুড়ে বড় বড় আর্থিক সংকট মোকাবিলায় তার ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে। ২০০৮ সালের বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার সময় কানাডার অর্থনীতিকে দক্ষ হাতে পরিচালনা করা এবং ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের গভর্নর হিসেবে ব্রেক্সিটকালীন যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় তাঁর ভূমিকা স্মরণীয়।
কার্নি নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্পের উপর তীব্র সমালোচনা করেছেন এবং কানাডার সার্বভৌমত্ব রক্ষাকে নিজের প্রধান অঙ্গীকার হিসেবে তুলে ধরেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কানাডায় ঘর, কলকারখানা এবং নতুন শক্তির উৎস গড়ে তোলার মাধ্যমে আমেরিকার উপর নির্ভরশীলতা কমাবেন।
ট্রাম্পের হুমকি এবং কানাডার সংকট
ট্রাম্পের পক্ষ থেকে কানাডার পণ্যের ওপর আরোপিত ২৫ শতাংশ শুল্ক এবং দেশের ভূখণ্ডকে ‘৫১তম রাজ্য’ বানানোর হুমকি কানাডার অর্থনীতিতে প্রবল চাপ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কার্নির মতো অভিজ্ঞ আর্থিক নেতা এমন সংকটে দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন।
কার্নি জানিয়েছেন, তিনি ট্রাম্পের সঙ্গে ভবিষ্যতে আলোচনায় বসবেন, তবে “স্বাধীন দুই জাতির মধ্যে সম্পর্ক নিয়েই” সেই আলোচনা হবে। পাশাপাশি তিনি ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে নিরাপত্তা, সামরিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন।
এনডিপি নেতার পদত্যাগ
এদিকে, নির্বাচনে কেন্দ্র-বামপন্থী ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি) বড় ধাক্কা খেয়েছে। দলটি সংসদীয় দলের মর্যাদা রক্ষার মতো আসনও পায়নি। এনডিপি নেতা জগমিত সিং নিজের আসন হারিয়ে নেতৃত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি কার্নিকে উদ্দেশ করে বলেন, “সব কানাডীয়ের প্রতিনিধিত্ব ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তাঁর বড় দায়িত্ব রয়েছে।”
এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে পূর্ণাঙ্গ ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি।