১৫ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Trump

কাতারের কাছ থেকে বিলাসবহুল উড়োজাহাজ নিতে যাচ্ছেন ট্রাম্প, উপহারের বৈধতা নিয়ে বিতর্কে মার্কিন রাজনীতি

সমাজকাল ডেস্ক:

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একটি বিলাসবহুল বোয়িং ৭৪৭-৮ জাম্বো জেট গ্রহণের পরিকল্পনা করছেন, যেটি কাতারের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে ‘উপহার’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে বলে জানিয়েছে এবিসি নিউজ ও নিউইয়র্ক টাইমস। এই উড়োজাহাজটি সাময়িকভাবে ‘এয়ারফোর্স ওয়ান’ হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে এবং মেয়াদ শেষে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সিয়াল লাইব্রেরিতে হস্তান্তর করা হবে।

এয়ারফোর্স ওয়ান নামটি মার্কিন প্রেসিডেন্টদের সরকারি উড়োজাহাজকে বোঝায়, যা সাধারণত বিশেষভাবে সজ্জিত বোয়িং ৭৪৭ সিরিজের উড়োজাহাজ। বর্তমানে যেটি ব্যবহৃত হচ্ছে, সেটি বহু বছরের পুরোনো এবং প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। তাই একে ‘আধুনিকায়ন’ হিসেবে দেখতে চাইলেও, বিষয়টি অনেকের কাছেই একটি রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে—বিশেষ করে যখন সেটি আসছে কাতারের মতো একটি বিতর্কিত মধ্যপ্রাচ্যীয় রাষ্ট্র থেকে।

📌 সংবিধান ও উপহারনীতি:

যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে ‘Foreign Emoluments Clause’ নামে পরিচিত একটি ধারা অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মকর্তা বিদেশি রাষ্ট্র, রাজা বা যুবরাজ থেকে উপহার গ্রহণ করতে পারেন না—কংগ্রেসের অনুমোদন ব্যতিরেকে। ট্রাম্পের প্রশাসন দাবি করছে, যেহেতু এটি প্রথমে মার্কিন বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তরিত হবে এবং পরে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় ট্রাম্পের সংগ্রহশালায় যাবে, তাই এটি ব্যক্তিগত উপহার নয় এবং সংবিধান লঙ্ঘনও নয়।

📌 কাতার কী বলছে?

ওয়াশিংটনে কাতার দূতাবাসের মুখপাত্র আলি আল-আনসারি জানিয়েছেন, এটি কোনো উপহার নয়, বরং একটি সম্ভাব্য ‘অস্থায়ী হস্তান্তর’—যেটি কাতারের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ও মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের আলোচনার অংশ। এখনো কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি।

📌 রাজনীতিক ও জনমত:

এই খবরে রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট উভয় দলের অনেকেই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কট্টরপন্থী রিপাবলিকান রাজনীতিক লরা লুমার একে ‘জিহাদিদের কাছ থেকে উপহার নেওয়া’ বলে আখ্যায়িত করে বলেছেন, কাতার হামাস ও হিজবুল্লাহকে সমর্থন দেয়—যারা মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করে। অন্যদিকে ডেমোক্রেটিক পার্টি একে ট্রাম্পের স্বার্থন্বেষী চরিত্রের প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরেছে।

ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কমিটি (DNC) এক বিবৃতিতে বলেছে, “যখন সাধারণ আমেরিকানরা উচ্চমূল্যের চাপে দিশেহারা, তখন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ধনীদের উপঢৌকন গ্রহণ করে নিজের সুবিধা নিশ্চিত করতে ব্যস্ত।”

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আগেও ব্যক্তিগত ব্যবসায়িক স্বার্থ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার মেলবন্ধন নিয়ে বহুবার প্রশ্ন উঠেছে। হোয়াইট হাউসে থাকার সময়ও তিনি তাঁর হোটেল, গলফ রিসোর্ট ও ব্র্যান্ড থেকে আয় অব্যাহত রেখেছিলেন। এই ঘটনাটি সেই বিতর্ককে নতুন মাত্রা দিয়েছে।

খবরে জানা গেছে, ট্রাম্প চলতি সপ্তাহেই কাতারসহ মধ্যপ্রাচ্যের তিনটি দেশ সফরে যাচ্ছেন। সেই সফরের সময় উড়োজাহাজটি নিয়ে চূড়ান্ত পরিকল্পনার ঘোষণা আসতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn