ইতিহাসের পাতা থেকে

সমাজকাল ডেস্ক :

আজ রবিবার, ১১ মে। গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জী অনুসারে বছরের ১৩১তম (অধিবর্ষে ১৩২তম) দিন। বছর শেষ হতে বাকি রয়েছে আরও ২৩৪ দিন।

ইতিহাসের পাতায় এই দিনটি স্থান করে নিয়েছে বহু যুগান্তকারী ঘটনার জন্য। সভ্যতার বিবর্তন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অগ্রগতি, রাজনৈতিক উত্থান-পতন, উপনিবেশবিরোধী আন্দোলন কিংবা সাংস্কৃতিক সৃজনশীলতার প্রতিফলন—সবই মিলে ১১ মে হয়ে উঠেছে এক বিশেষ দিন। নিচে তুলে ধরা হলো এই দিনে সংঘটিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও প্রেক্ষাপট:

🌍 বিশ্ব ইতিহাসে আজকের দিন
🔹 ৩৩০ – কনস্টান্টিনোপলকে রাজধানী ঘোষণা
রোম সম্রাট কনস্টান্টাইন দ্য গ্রেট রোম সাম্রাজ্যের নতুন রাজধানী হিসেবে বাইজেন্টিয়ামের নাম পরিবর্তন করে ‘কনস্টান্টিনোপল’ (বর্তমান ইস্তাম্বুল) করেন। এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রশাসনিক নয়, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও এক বৈপ্লবিক পরিবর্তনের সূচনা করে। এটি পরবর্তীতে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মূল কেন্দ্র হয়ে ওঠে।

🔹 ৯১২ – আলেকজান্ডার বাইজেন্টাইন সম্রাট হন
আলেকজান্ডার তাঁর ভাই সম্রাট লিওন ষষ্ঠের মৃত্যুর পর ক্ষমতায় বসেন। তাঁর স্বল্পকালীন শাসনকাল (মাত্র ১৩ মাস) বাইজেন্টাইন রাজনীতিতে এক অস্থির অধ্যায় তৈরি করে।

🔹 ১৭৪৫ – ফরাসি বিজয় ও ইউরোপীয় শক্তি পুনর্বিন্যাস
অস্ট্রিয়া, ইংল্যান্ড ও হল্যান্ডের যৌথ মিত্রশক্তির বিরুদ্ধে এক যুদ্ধে ফরাসি বাহিনী জয়লাভ করে। ইউরোপের রাজতান্ত্রিক ভারসাম্য এ ঘটনার পর নতুন মাত্রা পায়।

🔹 ১৮৫৭ – সিপাহী বিদ্রোহ ও দিল্লি অধিকার
ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে ভারতের প্রথম সশস্ত্র গণঅভ্যুত্থান হিসেবে পরিচিত সিপাহী বিদ্রোহে আজকের দিনে বিদ্রোহীরা দিল্লি শহর ব্রিটিশদের কাছ থেকে দখলে নেয়। এ ঘটনা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে এক মাইলফলক।

🔹 ১৮৬৭ – লুক্সেমবার্গের স্বাধীনতা
ইউরোপের কেন্দ্রে অবস্থিত ছোট্ট দেশ লুক্সেমবার্গ আন্তর্জাতিক চুক্তির মাধ্যমে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পায়। এটি আধুনিক ইউরোপের কূটনৈতিক ব্যালান্সিংয়ের অংশ ছিল।

🔹 ১৯৩৫ – প্রথম টেলিভিশন সম্প্রচার
জার্মানির বার্লিন শহরে প্রথমবারের মতো একটি টেলিভিশন সম্প্রচার যন্ত্র আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু করে। এটি ছিল বৈদ্যুতিক গণমাধ্যমের যুগে প্রবেশের প্রথম ধাপ।

🔹 ১৯৪০ – দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বেলজিয়ামে মিত্র বাহিনী
নাৎসি বাহিনীর আগ্রাসনের প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ ও ফরাসি বাহিনী বেলজিয়ামে প্রবেশ করে। এটি ছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির সম্মিলিত সামরিক কৌশলের অংশ।

🔹 ১৯৪৯ – ইসরায়েলের জাতিসংঘে অন্তর্ভুক্তি
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার এক বছর পর ইসরায়েল আজকের দিনে জাতিসংঘের পূর্ণ সদস্যপদ লাভ করে। এটি আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে একটি বিতর্কিত মোড় ছিল।

🔹 ১৯৭২ – বাংলাদেশকে মেক্সিকোর স্বীকৃতি
আজকের দিনে ল্যাটিন আমেরিকার রাষ্ট্র মেক্সিকো স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়। এটি বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির তালিকায় একটি গর্বজনক সংযোজন।

🔹 ১৯৮৫ – চাঁপাইনবাবগঞ্জে কুরআন দিবসে হত্যাকাণ্ড
বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘কুরআন দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে ৮ জন নিহত হন। এ ঘটনাটি দেশে ইসলামি রাজনীতির ইতিহাসে একটি রক্তাক্ত অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত।

🔹 ২০১৬ – যুদ্ধাপরাধী নিজামীর দণ্ড কার্যকর
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত জামায়াতে ইসলামীর নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি কার্যকর হয়। এটি ছিল জাতীয় বিচারপ্রক্রিয়ায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।

🔹 ২০১৮ – বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ
যুক্তরাষ্ট্রের কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে আজকের দিনে উৎক্ষেপণ করা হয় বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১। এটি ছিল দেশের মহাকাশ অভিযাত্রার সূচনা ও এক গর্বিত অর্জন।

🧠 বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও সংস্কৃতিতে আজকের দিন
🔹 ১৯৯৪ – গাজায় ইসরায়েলি দখলদারির অবসান
২৭ বছরের ইসরায়েলি দখলদারির অবসান ঘটে ফিলিস্তিনি পুলিশের গাজায় প্রবেশের মাধ্যমে। মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে এ দিনটি ছিল প্রতীকি মুক্তির দিন।

🔹 ১৯৯৭ – দাবাড়ু কাসপারভকে হারায় ডীপ ব্লু
আইবিএম নির্মিত সুপারকম্পিউটার ‘ডীপ ব্লু’ প্রথমবারের মতো কিংবদন্তি দাবাড়ু গ্যারি কাসপারভকে পরাজিত করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ইতিহাসে এটি ছিল যুগান্তকারী ঘটনা।

🔹 ১৯৯৮ – ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষা
রাজস্থানের পোখরানে ভারত সরকার গোপনে ভূগর্ভে তিনটি পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়। দক্ষিণ এশিয়ায় এটি পারমাণবিক উত্তেজনার সূচনা করে।

🔹 ২০১৮ – আয়ারল্যান্ডের প্রথম টেস্ট ম্যাচ
আজকের দিনে আয়ারল্যান্ড তাদের ইতিহাসের প্রথম টেস্ট ম্যাচে অংশগ্রহণ করে। যদিও আবহাওয়ার কারণে প্রথম দিনের খেলা সম্ভব হয়নি, তবে এটি ছিল ক্রিকেট ইতিহাসে আয়ারল্যান্ডের ঐতিহাসিক সূচনা।

১১ মে শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়—এটি ইতিহাসের এক সঞ্চিত অধ্যায়। যুদ্ধ, প্রযুক্তি, রাষ্ট্রগঠন ও মানবিক জাগরণের বহু নিদর্শন লুকিয়ে আছে এই দিনে। অতীতের এই শিক্ষা আমাদের বর্তমানকে জানাতে ও ভবিষ্যতের পথ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ অনুপ্রেরণা দেয়।