১৫ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় প্রস্তুত রাশিয়া : পুতিন

পুতিন বললেন, ‘ইউক্রেনের সঙ্গে সরাসরি আলোচনায় প্রস্তুত রাশিয়া’ — যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের চাপের মুখে যুদ্ধবিরতি আহ্বান

সমাজকাল ডেস্ক :

তিন বছর ধরে চলমান ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতের অবসানে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ বাড়াচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নেতারা। এরই মধ্যে শনিবার রাতে এক বিরল টেলিভিশন ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঘোষণা দিয়েছেন, ইউক্রেনের সঙ্গে “কোনো শর্ত ছাড়াই” সরাসরি শান্তি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রাশিয়া।

পুতিন বলেন, “আমরা আগামী বৃহস্পতিবার, ১৫ মে, ইস্তাম্বুলে আলোচনা শুরু করতে চাই। এখানেই আগেও আলোচনা হয়েছিল, যেটা মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায়।” তিনি এও বলেন, “এই আলোচনার লক্ষ্য হবে সংঘাতের মূল কারণ দূর করে দীর্ঘমেয়াদি ও টেকসই শান্তি প্রতিষ্ঠা।”

পুতিনের এই আহ্বান আসে এমন এক সময়ে, যখন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে জার্মান চ্যান্সেলর, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট, যুক্তরাজ্য ও পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রীরা একসঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে বসেন এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানান। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ বলেন, সোমবার থেকে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতি মানতে হবে—না হলে রাশিয়ার বিরুদ্ধে “গুরুতর নিষেধাজ্ঞা” দেওয়া হবে।

এ বক্তব্যের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থন রয়েছে বলেও জানানো হয়। উল্লেখ্য, যুদ্ধ শেষ করাকে ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনের অগ্রাধিকার হিসেবে দেখছেন। প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকে ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ চারবার মস্কো সফর করেছেন এবং একাধিকবার রুশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক হয়েছে।

তবে তীব্র কূটনৈতিক তৎপরতা সত্ত্বেও এখনো পর্যন্ত রাশিয়া সীমিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক সম্মতি দেয়নি। পুতিন অবশ্য বলেছেন, মস্কো কখনোই কিয়েভের সঙ্গে আলোচনায় ‘না’ বলেনি, বরং এখন সিদ্ধান্ত ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করছে।

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ সিএনএন-কে বলেন, “আমরা শান্তি আলোচনার পক্ষে, কিন্তু ইউরোপ আমাদের ওপেনলি চ্যালেঞ্জ করছে। তাই যেকোনো চাপ অকার্যকর।” যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার প্রশংসা করলেও তিনি সতর্ক করেন, “চাপ দিয়ে কিছু হবে না।”

বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পুতিনের আলোচনার প্রস্তাব মূলত সময়ক্ষেপণ এবং পুনরায় অবস্থান মজবুত করার কৌশল হতে পারে। পুতিন বলেছেন, “এই আলোচনা কোনো নতুন সংঘাতের প্রাক্‌কথা হবে না, বরং দীর্ঘস্থায়ী শান্তির প্রথম ধাপ হতে হবে।”

পূর্ব ইউরোপে ন্যাটোর সম্প্রসারণ এবং ইউক্রেনের পশ্চিমা সমর্থনকে ‘সংঘাতের মূল কারণ’ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে দেখিয়ে আসছেন পুতিন। তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা মিত্রদের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—এই যুদ্ধে প্রথমে রুশ আগ্রাসন বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।