১৫ মে ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আসছে নতুন রাজস্ব নীতি বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা তাঁদের দীর্ঘদিনের আধিপত্য হারাতে পারেন, এমনকি নতুন গঠিত ‘রাজস্ব নীতি বিভাগে’ তাঁদের পদ হারানোর আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। কারণ, এই বিভাগে সচিব বা সিনিয়র সচিব পদে সরকার যে কোনো যোগ্য সরকারি কর্মকর্তাকে নিয়োগ দিতে পারবে—এমনই বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ খসড়া অনুমোদন করেছে, যেখানে বলা হয়েছে—অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে দুটি আলাদা বিভাগ গঠিত হবে: রাজস্ব নীতি বিভাগ এবং রাজস্ব ব্যবস্থাপনা বিভাগ।

নতুন বিভাগের অধীনে যা থাকছে:
রাজস্ব নীতি বিভাগ হবে সম্পূর্ণভাবে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে।

কাস্টমস, আবগারি ও মূল্য সংযোজন কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এবং আয়কর আপিল ট্রাইব্যুনাল এই বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হবে।

বিভাগের সচিব পদে নিয়োগে এনবিআরের কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার না-ও থাকতে পারে।

বিভাগটির মূল কার্যক্রম:
১. কর নীতির প্রণয়ন ও সংশোধন:
করের হার, ছাড়, বেইস সম্প্রসারণসহ সব ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এ বিভাগ থেকে।

২. বৈদেশিক চুক্তি ও দ্বৈত কর এড়ানোর চুক্তি:
আন্তর্জাতিক কর বিষয়ক চুক্তি ও মতামত প্রদান।

৩. স্বয়ংক্রিয়তা ও গবেষণা:
এনবিআর ও অন্যান্য বিভাগে অটোমেশন দ্রুত বাস্তবায়ন, রাজস্ব সংক্রান্ত গবেষণা, পূর্বাভাস ও বিশ্লেষণ।

৪. আইন সংশোধন ও বাস্তবায়ন তদারকি:
স্ট্যাম্প আইন, ইনকাম ট্যাক্স, গিফট ট্যাক্স, ভ্যাট ইত্যাদি বিষয়ক নীতিনির্ধারণ ও সংশোধন।

৫. উন্নয়ন প্রকল্প:
রাজস্ব নীতির দক্ষতা ও স্বচ্ছতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন।

উপদেষ্টা কমিটি:
রাজস্ব নীতি বিভাগকে নিয়মিত পরামর্শ দেবে একটি উপদেষ্টা কমিটি, যার সদস্য হবেন অর্থনীতিবিদ, কর বিশেষজ্ঞ, আইনবিদ, অডিট-অ্যাকাউন্টিং বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি, ট্যারিফ কমিশন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়/বিভাগের প্রতিনিধিরা।

প্রেক্ষাপট ও ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা:
২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর গঠিত একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি এনবিআর পুনর্গঠন ও রাজস্ব প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে এই প্রস্তাবনা দেয়। এই আইনের মাধ্যমে এনবিআরের নীতি নির্ধারণ ও আদায় ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম পৃথক করা হবে, যাতে করে কার্যকর ও জবাবদিহিমূলক রাজস্ব ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হয়।

সংবিধানের ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, বর্তমান সংসদ ভেঙে যাওয়ায় রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে অধ্যাদেশ আকারে এ আইন কার্যকর হতে যাচ্ছে।
নতুন এই রাজস্ব নীতি বিভাগের মাধ্যমে কর প্রশাসনে নীতি ও বাস্তবায়নের মাঝে কাঠামোগত পৃথকীকরণ যেমন সুস্পষ্ট হবে, তেমনি এনবিআরের ঐতিহ্যবাহী কর্তৃত্ব ও অভ্যন্তরীণ প্রভাব-প্রতিপত্তিরও বড় ধরনের পুনর্বিন্যাস ঘটতে চলেছে—যা একদিক থেকে প্রশাসনিক আধুনিকীকরণ হলেও, অন্যদিকে এনবিআরের ভেতরে অসন্তোষ ও প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।