১৫ জুন ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
Goverment

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ : প্রজ্ঞাপন

সমাজকাল ডেস্ক :

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগ এবং এর সকল সহযোগী, অঙ্গ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ১২ মে (সোমবার) বিকেলে জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

প্রজ্ঞাপনের মূল বিষয়বস্তু:

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিচারাধীন মামলাগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলোর—

সব ধরনের রাজনৈতিক কার্যক্রম,

অনলাইন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা,

সভা-সমাবেশ, মিছিল, সম্মেলন,

গণমাধ্যমে উপস্থিতি

পুরাপুরি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

অভিযোগের পটভূমি:

প্রজ্ঞাপন অনুসারে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি ক্ষমতায় আসার পর থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী ও নিপীড়নমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে বলা হয়, এই সময়কালে বিরোধী দল, ভিন্নমতাবলম্বী ব্যক্তি, ছাত্র ও জনতার উপর ব্যাপকভাবে—

গুম, খুন, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও

মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।

২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান দমন করতেই এসব অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ উঠে আসে।

আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পর্যবেক্ষণ:

এই অভিযোগের ভিত্তিতে দেশি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে জনসাধারণের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়েছে।

বিচার কার্যক্রম ও নিরাপত্তা শঙ্কা:

বর্তমানে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও দেশের ফৌজদারি আদালতে বহু মামলা বিচারাধীন।

দলটির নেতাকর্মীরা মামলা প্রভাবিত করতে সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেখানো, রাষ্ট্রবিরোধী লিফলেট বিতরণ ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রচার করছে বলে সরকার দাবি করছে।

এসব কর্মকাণ্ডে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে।

 

আইনি ভিত্তি:

নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ‘সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯’ এর ধারা ১৮(১) ও ‘সন্ত্রাসবিরোধী (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অনুযায়ী সরকারের ক্ষমতা প্রয়োগ করে। বলা হয়েছে, ট্রাইব্যুনালে বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দলের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ থাকবে।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট:

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) সহ কয়েকটি সমমনা দল বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে আসছিল। তাদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতেই:

গত ১০ মে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আইন সংশোধনের সিদ্ধান্ত হয়।

একই রাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অধ্যাদেশ জারি করা হয়।

পরদিন অনুমোদন হয় সন্ত্রাসবিরোধী অধ্যাদেশ, যার ভিত্তিতে এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করা হয়।

রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া:

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ সিদ্ধান্তকে “জনগণের বিজয়” হিসেবে অভিহিত করেছেন।

নির্বাচন কমিশন বলেছে, তারা গেজেট পাওয়ার পর আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানাবে।

আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ এখন অনেকটাই আদালতের রায়ের উপর নির্ভরশীল। বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘ হলে এই নিষেধাজ্ঞা আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। তবে এটুকু নিশ্চিত—বাংলাদেশের রাজনীতিতে এটি এক অভূতপূর্ব ও বিতর্কিত অধ্যায়ের সূচনা।

পোস্টটি শেয়ার করুন

Facebook
WhatsApp
X
LinkedIn