অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী—অ্যান্থনি আলবানিজের গল্প
সমাজকাল ডেস্ক:
একটি ছোট্ট অ্যাপার্টমেন্টে জন্ম, মায়ের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা, বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতির স্বাদ, এবং সেখান থেকে বিশ্বের অন্যতম গণতান্ত্রিক দেশের প্রধানমন্ত্রীত্বে অভিষেক—এ যেন গল্প হলেও সত্যি। তিনি অ্যান্থনি আলবানিজ। ২০২২ সালে অস্ট্রেলিয়ার ৩১তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়া এই নেতা প্রমাণ করেছেন যে সংকল্প থাকলে সামাজিক সীমাবদ্ধতা কখনোই সাফল্যের পথে বাধা হতে পারে না।
শিকড় থেকে শুরু
অ্যান্থনি নরমান আলবানিজের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২ মার্চ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। তাঁর জন্ম সিঙ্গেল মাদার মেরিয়ানের কোলে। বাবাকে কোনোদিন দেখেননি অ্যান্থনি। মা-ই ছিলেন তার অভিভাবক, অভিভাবনা এবং প্রেরণা। সরকারি আবাসনে বড় হওয়া অ্যান্থনি বেড়ে ওঠেন অস্ট্রেলিয়ার শ্রমজীবী শ্রেণির মূল্যবোধে।
রাজনীতিতে হাতেখড়ি
ছাত্রাবস্থাতেই রাজনীতিতে প্রবেশ। ইউনিভার্সিটি অব সিডনিতে পড়াকালীন সময় থেকেই লেবার পার্টির রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯৬ সালে মাত্র ৩৩ বছর বয়সে নিউ সাউথ ওয়েলসের গ্রেইনডলার আসন থেকে ফেডারেল সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
ধাপে ধাপে ওপরে
২০০৭-২০১৩ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন পরিবহন ও অবকাঠামো মন্ত্রী। স্বল্প সময়ের জন্য ২০১৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার উপপ্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। প্রতিটি পদেই ছিলেন দৃঢ় ও ব্যতিক্রমী। তার দূরদৃষ্টি, সাহসিকতা এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ তাঁকে পার্লামেন্টে ‘লোকজনের প্রতিনিধি’ হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলে।
২০২২: ইতিহাস গড়া মুহূর্ত
২০১৯ সালে লেবার পার্টির নেতৃত্ব গ্রহণের পর ২০২২ সালে সাধারণ নির্বাচনে দলকে বিজয়ী করে দেশের নেতৃত্বে আসেন। তার জয় শুধু লেবার পার্টির নয়—এটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার এক নতুন মূল্যবোধে বিশ্বাসের জয়: সমতা, সবুজ অর্থনীতি এবং বহুত্ববাদ।
প্রগতিশীল নীতি ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি জোর দিয়েছেন জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ, আদিবাসী জনগণের সাংবিধানিক স্বীকৃতি এবং স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় সাম্যের ওপর। পাশাপাশি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব মোকাবিলায় ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক মজবুত করতে কাজ করছেন তিনি।
ব্যক্তিগত জীবনে সংবেদনশীল এক মানুষ
২০১৯ সালে এক মারাত্মক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণে বেঁচে যাওয়ার পর জীবন সম্পর্কে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যায়। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবারের প্রতি মনোযোগী হন। একমাত্র সন্তান এবং সংগীতপ্রেমই এখন তার অবসরের সঙ্গী।
প্রধানমন্ত্রী—অ্যান্থনি আলবানিজের জীবন তাই শুধু রাজনীতির গল্প নয়, এটি সংগ্রামের, বিশ্বাসের এবং এক নতুন ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতির গল্প।